খুলনা, বাংলাদেশ | ২৪ ভাদ্র, ১৪৩১ | ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  জাতীয় নাগরিক কমিটির আত্মপ্রকাশ আজ

শ্যামনগর ও আশাশুনির ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ নিয়ে ভাঙন আতঙ্কে উপকূলের মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক,সাতক্ষীরা

বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই সাতক্ষীরার সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকার নদ-নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ঝুকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ গুলো নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে উপকূলের মানুষ। নদ-নদীর তীব্র স্রোতের তোড়ে জেলার শ্যামনগর উপজেলার উপকূলীয় এলাকার কৈখালী, গাবুরা, সোরা, লেবুবুনিয়া, নাপিতখালী, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী, রমজাননগরসহ বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

একই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের কুড়িকাউনিয়া, হরিষখালী, চাকলা, আনুলিয়া ইউনিয়নের বিছট ও সদর ইউনিয়নের দয়ারঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধে। বেশ কিছুদিন আগে কপোতাক্ষ নদের পানি কুড়িকাউনিয়া ও খোলপেটুয়া নদীর পানি হরিষখালী ও বিছট এলাকায় বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে প্রবশে করায় এসব নদ-নদীর তীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারি জনসাধারণের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে।

সিডর-আইলার মতো পাকৃতিক দূর্যোগে সর্বশান্ত হওয়া এ অঞ্চলের মানুষ বহু কষ্টে ঘুরে দাড়ানোর পর আবারও কোন এক প্রাকৃতিক দূর্যোগে ঝুকিপূর্ণ এসব বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বাড়িঘর সহ বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেত লবন পানিতে তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পাড়েছে। এখনই ঝুকিপূর্ন এসব বেড়িবাঁধ সংষ্কার করা না হলে মানুষ অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

গাবুরা ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম জানান, তার ইউনিয়নের দুই পাশ দিয়ে কপোতাক্ষ নদ ও খোলপেটুয়া নদী বয়ে গেছে। এসব নদ-নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানি বৃদ্ধি পেলে ইউনিয়নের ৯নং সোরা, লেবুবুনিয়া ও নাপিতখালী সহ বেশকয়েকটি গ্রামের বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। প্রতিবার জোয়ারের সময় এনব বাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে ঢুকতে থাকলে মাটি ক্ষয়ে পাউবো’র বেড়িবাঁধের মাটি ধসে পড়ে। ফলে সেখানে নতুন করে ভাঙ্গন দেখা দেয়।

তিনি আরো বলেন, ইউনিয়নের অপরাপর অংশে মেগা প্রকল্পের আওতায় কাজ চলছে। অথচ হরিশখালী ও ৯ নং সোরার মতো ঝুঁকিপূর্ণ অংশে কাজ না হওয়ায় সেই এলাকা বার বার ভাঙছে। অব্যাহত ভাঙনের কারণে দৃষ্টিনন্দনের একমাত্র মিষ্টি পানির পুকুরসহ একাধিক শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীনের ঝুঁকিতে রয়েছে। ভাঙন আতংকে বসবাস করছে ওই এলাকার মানুষ। তিনি দ্রুত গাবুরার ঝুকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ গুলো অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে মগা প্রকল্পের আওতায় এনে কাজ শুরু করার দাবি জানান।

তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরায় এক হাজার বিশ কোটি টাকা ব্যয়ে মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে প্রায় দুইবছর আগে। কিন্তু ইউনিয়নের ৯নং সোরা গ্রামের মালিবাড়ি সংলগ্ন এলাকার বেড়িবাঁধ সবচেয়ে ঝুকিপূর্ণ থাকলেও সেখানে অদ্যাবধি সেখানে মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়নি। বরং ‘জরুরী রক্ষণাবেক্ষণ’ নামে বারবার জোড়াতালি দেয়ায় প্রায়শই ওই এলাকায় বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিচ্ছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৯নং সোরা গ্রামের দৃষ্টিনন্দনসহ হরিশখালী এলাকায় টেকসই উপকুল রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু না হলে যেভাবে বাঁধে ধ্বস দেখা দিয়েছে তাতে খুব শীঘ্রেই বিস্তীর্ণ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন জানান, সিডর, আইলা, বুলবুল, ইয়াস ও আম্ফানসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুযোর্গে জেলার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে প্রতাপনগর এলাকার মানুষ। এসব দুর্যোগের ক্ষতি এখনো পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি এখানকার মানুষ। এছাড়া প্রতিবার কোন দুর্যোগ এলেই এই এলাকার মানুষ বেড়িবাঁধ ভাঙ্গন অতঙ্কে থাকে। বর্তমানে প্রতাপনগর ইউনিয়নের কুড়িকাউনিয়া, হরিষখালী, চাকলাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে বেড়িবাঁধ মারাত্মক ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বর্ষার শুরুতেই কপোতাক্ষ নদ ও খোলপেটুয়া নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ার বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব বেড়িবাঁধ গুলো আরো ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তিনি দ্রুত এসব বাঁধ সংষ্কারের দাবি জানান।

সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-১ এর উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মহিদুর রহমান জানান, তার বিভাগের আওতাধীন ৩৮০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২০ কিলোমিটার ঝুকিপূর্ণ। তার মধ্যে ৬কিলোমিটার অধিক ঝুকিপূর্ণ। আপদকালিন কাজের আওতায় ঝুকিপূর্ণ এসব বেড়িবাঁধের মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া গোটা গাবুরা ইউনিয়নে প্রায় ২৯ কিলোমিটার উপকুল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য মেগা প্রকল্পের আওতায় ৪৮টি প্যাকেজ তৈরী করা হয়েছে। প্রায় অর্ধেক প্যাকেজের কাজ চলমান থাকলেও হরিশখালী ও দৃষ্টিনন্দনের ২৬ নং প্যাকেজের কাজ করার জন্য অদ্যবধি কোন ঠিকাদার পাওয়া যায়নি।

তিনি আরও বলেন, হরিশখালী ও দৃষ্টিনন্দন এলাকার ভাঙনের বিস্তৃতি ঠেকাতে পাঁচ হাজার বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জরুরী রক্ষনাবেক্ষন কাজের আওতায় অপরাপর প্রকল্প থেকে সংগৃহীত প্রায় সাড়ে সাতশ ব্যাগ ইতিমধ্যে ভাঙন কবলিত অংশে ডাম্পিং করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-২ এর উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম জানান, তার বিভাগের আওতাধীন প্রায় ৪০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি পোল্ডারের প্রায় ১০ কিলোমিটার বাঁধের প্রায় ৪২টি পয়েন্ট ঝুকিপূর্ন। এসব ঝুকিপূর্ন বাঁধের মধ্যে প্রায় ১ দশমিক ১৩০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অধিক ঝুকিপূর্ন। শট টেন্ডারের মাধ্যমে জরুরী ভিত্তিতে এসব ঝুকিপূর্ন বেড়িবাঁধের মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে।

খুলনা গেজেট/এএজে

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!